আমরা সবাই পৃথিবী ধ্বংসের দিনের কথা শুনেছি বিজ্ঞানী ও ধর্মগুরুদের মুখ থেকে। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী দিচ্ছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ষষ্ঠবারের মতো পৃথিবীর সকল প্রাণের বিলুপ্তি ঘটবে। তাদের ধারণা, কোটি কোটি বছর আগে আরও পাঁচবার এরকম হয়েছিলো পৃথিবীতে। অপরদিকে ধর্মগুরুদের ভবিষ্যদ্বাণী, পাপের আধিক্যের কারণে পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। অথচ এটা প্রায় অসম্ভব যে এই দুই পক্ষ (বিজ্ঞানী ও ধর্মগুরু) কোনো বিষয়ে একমত হবে।

ছবি:ইন্টারনেট

তবে বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের শুরুর দিকে- শেকসপিয়রদের সমসাময়িক ফ্রান্সিস ব্যাকন এবং পরবর্তীতে ১৭ শতকের ফেঞ্চ দার্শনিক রেনে ডেসকার্টেসদের যুগেও এই ধরনের চিন্তাশীল লোক তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যেতো না, যারা উভয় বিষয় (বিজ্ঞান ও ধর্ম) নিয়েই যৌক্তিক চিন্তা-ভাবনা করতে পারেন। যারা জাদু, স্বর্গ, জ্যোতির্বিজ্ঞান সবকিছুতেই বিশ্বাস করেন। ধর্মীর চিন্তা ও চর্চার ওই বিরোধী সময়ও আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক স্যার আইজ্যাক নিউটন বাইবেলের ধর্মীয় শিক্ষা, অতিপ্রাকৃতিক বিষয়াদিতে বিশ্বাসের সাথে গণিত ও বিজ্ঞানের সমন্বয় করতেন।

যদিও নিউটনের অনেক সূত্রই আধুনিক পদার্থবিদগণের নিকট অতটা গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন, নিউটন হ্যারি পটারের সেই ভিলেনের মতো স্বর্গীয় পাথরের খুঁজে ছিলেন যা লোহাকে স্বর্ণে রুপান্তরিত করতে পারে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, নিষ্ঠাবান ধার্মিক নিউটন বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যাখ্যা করে লিখেছিলেন, পৃথিবী ধ্বংস হবে ২০৬০ সালে। অদ্ভুত কিছু গাণিতিক সমীকরণের সাহয্যে তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, হয়তো পৃথিবী ২০৬০ সালে বা এর কিছু পরে ধ্বংস হবে, তবে অবশ্যই এর আগে না। আমি এটি পৃথিবীর ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে লিখিনি।

আমি তাদের জন্য লিখেছি যারা প্রায়ই পৃথিবী ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে থাকেন এবং দেখা যায় সেগুলো পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। ফলে তাদের কারণে সত্য ধর্মের সম্মানহানি ঘটে। তবে বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিজ্ঞান আমাদেরকে আরও অস্থিতিশীল মহাবিশ্বের খবর দিচ্ছে যা হয়তো নিউটন কল্পনাও করতে পারেননি। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োক্যামেস্ট্রির প্রফেসর আইজ্যাক আসিমভ বলেছে, নিউটনের ওই তত্ত্ব অসম্পূর্ণ হলেও এটি একেবারেই ভুল নয়। নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের বোঝাপড়ায় এখনও তা কাজে লাগবে।

 

 

কলমকথা/ বিথী